Sunday, August 23, 2020

জেনে রাখুন, ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে পালস চেক করবেন

জেনে রাখুন, ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে পালস চেক করবেন

মেডিকেল নিউজ প্লাস (বাংলা), ২৪/০৮/২০২০ : বর্তমানে শরীর খারাপ করলেই নানারকম টেস্ট করতে হয়, ইউরিন টেস্ট, স্টুল টেস্ট, সুগার টেস্ট, ব্লাড টেস্ট, প্রেসার চেক ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমেই অসুস্থ ব্যক্তির 'পালস' ঠিক আছে কিনা তা দেখা উচিত। একটা সময় ছিল যখন  চিকিৎসকেরা শুধুমাত্র নাড়ি দেখেই অনেক কিছু বলে দিতে পারতেন। তাই এই নাড়ি দেখার বিষয়টি যদি একটু জেনে রাখা যায়, তাহলে হঠাৎ করে পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসক এসে পৌঁছনোর আগেই পালস দেখে রাখতে পারলে, তাঁকে অন্তত জানানো যাবে যে তিনি এসে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত পালস রেট কেমন ছিল। এতে চিকিৎসকেরও বুঝতে সুবিধা হবে।  

অসুস্থ ব্যক্তির পালস বুঝতে গেলে তাঁর হাতের কব্জির নিচের দিকে নাড়ির ওপর আঙুলের তর্জনী, মধ্যমা  এবং অনামিকা দিয়ে আলতো চাপ দিতে হবে। তাহলেই অসুস্থ ব্যক্তির নাড়ির স্পন্দন কেমন তা সহজেই বুঝতে পারা যাবে। আগেকার দিনে চিকিৎসকেরা নাড়ির ওপারে রাখা আঙুলগুলি দিয়েই অসুস্থতার অনেক কিছু টের পেয়ে যেতেন। তর্জনী দিয়ে তাঁরা বায়ু বুঝতে পারতেন, মধ্যমা দিয়ে তাঁরা পিত্ত সম্পর্কে বুঝতেন এবং অনামিকা দিয়ে তাঁরা বুঝতেন রোগীর কফের গতি।এরপর তাঁরা চিকিৎসা শুরু করতেন। 

শরীরে বায়ুর আধিক্য থাকলে নাড়ি চলবে বক্রভাবে। পিত্তের আধিক্য বেশি হলে নাড়ি চলবে চঞ্চলভাবে। কফের আধিক্য থাকলে নাড়ির গতি হবে স্থির। যদি বায়ু ও পিত্তের উভয় সমস্যাই থাকে তাহলে নাড়ি চলবে কখনো বক্রভাবে আবার কখনো চঞ্চলভাবে। বায়ু এবং কফ একসাথে থাকলে নাড়ি কখনো বক্রভাবে চলবে আবার কখনো কখনো স্থির হয়ে আসবে। যদি দেখা যায় নাড়ি কখনো বক্র, কখনো চঞ্চল আবার কখনো স্থির হয়ে আসছে, তাহলে বুঝতে হবে রোগীর তিনটি সমস্যাই রয়েছে।

যিনি নাড়ি পরীক্ষা করবেন তাঁকে ধীর এবং স্ত্রীর থাকতে হবে এবং নাড়ির প্রকৃত প্রকৃতি তাঁকে ধরতে হবে। অভিজ্ঞাতা অর্জনের জন্যে পরিবারের বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন সময়ে নাড়ি  পরীক্ষা করলে অভিজ্ঞাতা বাড়তে পারে। এখানে যে আলোচনা করা হচ্ছে, তা নিতান্তই ঘরোয়া উপায়। কেননা এখন পালস বা নাড়ি  দেখার জন্যে অনেক রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি বাজারে এসে গিয়েচ্ছে। তবে প্রেশার চেক করার যে ডিজিটাল ডিভাইস বা  অক্সিমিটার রয়েছে তাতে পালস রেট বোঝা সম্ভব। কিন্তু পালস বা নাড়ির  প্রকৃতি বোঝা সম্ভব নয়। অনেক সময় হয়ত সামান্য অসুস্থতা হয়েছে, যার জন্যে হয়ত ডাক্তারকে ডাকাও হচ্ছে না, সেসব ক্ষেত্রে কিন্তু ঘরোয়া উপায়ে নাড়ি  দেখতে জানার অভিজ্ঞতা কিন্তু বেশ কাজে দিতে পারে। 

এবার দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন বয়সে নাড়ির  গতি কেমন থাকা উচিত ? 

১ বছর বয়স পর্যন্ত - প্রতি মিনিটে ১৩০ - ১৪০ বার

১ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত - মিনিটে ১১৫ থেকে ১৩০ বার 

২ বছর থেকে ৩ বছর পর্যন্ত - মিনিটে ১০০ থেকে ১১৫ বার

৩ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত - মিনিটে ৮৫ থেকে ৯০ বার

১৫ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত - মিনিটে ৮০ থেকে ৮৫ বার

৫১ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত - মিনিটে ৫০ থেকে ৬৫ বার

একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে কোনো কোন সময় নাড়ি  পরীক্ষা করতে নেই - 

১) রোগী যদি বেশ ক্ষুধার্ত থাকে তাহলে তাঁর নাড়ি  পরীক্ষা করতে নেই

২) খাবার খাওয়ার সময় বা তার ঠিক পরেই নাড়ি পরীক্ষা করা উচিত নয়

৩) তেল মাখার পরক্ষণেই নাড়ি  পরীক্ষা করা ঠিক নয়

৪) রোগী যদি প্রখর রোদ  থেকে তেতেপুড়ে আসেন তাহলে তখনই তাঁর নাড়ি  পরীক্ষা করা ঠিক নয়

৫) সময় ব্যতিরেকে -  একজন সুস্থ মানুষের নাড়ির গতি সময় ব্যতিরেকে পরিবর্তনশীল হতে পারে। যেমন, সকাল বেলায় একরকম আবার গ্রীষ্মের দুপরে আর এক রকম, আবার রাত্রিবেলায় আর এক রকম, এরকমও হতে পারে। তাই যিনি নাড়ি  পরীক্ষা করবেন, তাঁকে এই বিষয়গুলিও বিবেচনায়  রাখতে হবে।

No comments:

Post a Comment